ব্রেকিং:
বন্যার্তদের পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র সমাজ-চলছে অর্থ সংগ্রহ শান্তি -সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বানে নাচোলে সুজনের মানববন্ধন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলাগাছের ভ্যালার বস্তায় মিলল ফেনসিডিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক গোমস্তাপুরে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
বন্যার্তদের পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র সমাজ-চলছে অর্থ সংগ্রহ শান্তি -সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বানে নাচোলে সুজনের মানববন্ধন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলাগাছের ভ্যালার বস্তায় মিলল ফেনসিডিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক গোমস্তাপুরে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
৫০

গুমবিরোধী সনদে সই বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৪  

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে উপদেষ্টাদের করতালির মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সনদে স্বাক্ষর করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।’

গুমবিরোধী সনদে সই বাংলাদেশেরআজ ৩০ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস।

 

এর এক দিন আগেই এই সনদে যুক্ত হলো বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস ইউং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বাসস। 

 

বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবাধিকারকর্মীদের জন্য একটি বড় মাইলফলক।

 

৭০০ জনের ওপরে মানুষ এখন পর্যন্ত গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকদের গুম করতে না পারে। এ জন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার গ্রহণ করা হবে।

 

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানিয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোর অন্যতম হলো, প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিস-অ্যাপিয়ার‌্যান্স (আইসিপিপিইডি) শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আইসিপিপিইডি জাতিসংঘের আওতাধীন একমাত্র আন্তর্জাতিক কনভেনশন, যা এনফোর্সড ডিস-অ্যাপিয়ার‌্যান্সকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো—জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম প্রতিরোধ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া গুরুতর এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

 

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনা তদন্তে সরকার এরই মধ্যে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি গঠন করে ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

তদন্ত কমিশন আইন, ১৯৫৬ সালের ক্ষমতাবলে এই কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ কমিশন।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে।

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাত শতাধিক মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক ৯টি সনদের আটটিতে সই করে। জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পরও বিগত সরকার গুমবিরোধী সনদে সই করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এ লক্ষ্যে সরকার গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিটি গুমের তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে দেশবাসীর কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

গত সোমবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ সরকারি বাহিনীর যে সদস্যরা ‘গুম, খুন, নির্যাতনের’ মতো অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ এবং আয়নাঘরের মতো চরম ঘৃণ্য সব অপকর্মের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সবার বিচার নিশ্চিত করা হবে। তালিকা প্রস্তুত করে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। দুর্নীতি ও সম্পদ পাচারের বিচার করা হবে।’

তাঁর বক্তব্যের পরদিন গঠিত কমিশনের কার্যপরিধিতে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাঁদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছেন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এতদ্বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা; জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা এবং জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে এই কমিশন।’

উল্লেখ্য, গুমবিরোধী সনদটি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ৩২টি দেশ এটিতে অনুস্বাক্ষর করার পর ২০১০ সালে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এই বিভাগের আরো খবর