ব্রেকিং:
বন্যার্তদের পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র সমাজ-চলছে অর্থ সংগ্রহ শান্তি -সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বানে নাচোলে সুজনের মানববন্ধন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলাগাছের ভ্যালার বস্তায় মিলল ফেনসিডিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক গোমস্তাপুরে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সর্বশেষ:
বন্যার্তদের পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র সমাজ-চলছে অর্থ সংগ্রহ শান্তি -সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আহ্বানে নাচোলে সুজনের মানববন্ধন চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাছের চারা বিতরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জে কলাগাছের ভ্যালার বস্তায় মিলল ফেনসিডিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক গোমস্তাপুরে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদক মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড
১৭৩

নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে তারা হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল। অনেকের কণ্ঠে বিজয়ের উল্লাস, কারও কারও স্লোগানে দ্রোহের আগুন। মুক্ত বাতাসে গলা উঁচু করে শব্দ করার আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তারা। গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে ভোলেননি আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহপাঠী-শিক্ষার্থীরা। 

এসেছিলেন স্বজনরাও। সবার দাবি-যারা নির্মমভাবে গুলি করেছে, ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, দ্রুত তাদের বিচার করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে লাখো কণ্ঠে ছিল সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা। যাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে, মুক্তির স্বাদ মিলেছে তাদের প্রতি লাল সালাম ধ্বনিত হয় জনসমুদ্র থেকে। বৃহস্পতিবার ছিল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তি। এ উপলক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারা দেশে ‘শহিদি মার্চ’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 
বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে ‘শহিদি মার্চ’ শুরু হয়। এ কর্মসূচি থেকে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা, শহিদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতাসহ ৫ দফা দাবি জনানো হয়। কর্মসূচি থেকে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। আর এজন্য আমাদের অনেক ভাই শহিদ হয়েছেন। 

তাদের স্মরণে আজ আমাদের এই শহিদি মার্চ। শহিদদের স্মরণ করে একটি কথাই বলতে চাই, যেই স্পিরিটকে ধারণ করে আমরা রক্তের ওপর দিয়ে লড়াই করেছি। সেই স্পিরিটকে ধারণ করার জন্য, বজায় রাখার জন্য আবারও জীবন দিতে প্রস্তুত থাকব। আমরা আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, হাসিনার মতো কোনো ফ্যাসিস্ট যদি আগামীতেও এই বাংলাদেশে জেঁকে বসার ন্যূনতম চেষ্টা করে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নতুন রূপ ধারণ করে আসা ফ্যাসিস্টদের রুখে দেবে। আজকে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতার এই জনস্রোত প্রমাণ করে শহিদদের রক্তে রঞ্জিত অভ্যুত্থান বৃথা যেতে পারে না।

এদিকে লাখো ছাত্র-জনতার ‘শহিদি মার্চ’-এর এই মিছিল ছিল উচ্ছ্বাসে ভরা। এ যেন মুক্ত-স্বাধীন ও ভয়-শঙ্কাহীন নিরাপদ জীবন। বিগত বছরগুলোতে যা ছিল কল্পনাতীত। আনন্দভরা এই মিছিলে ছিল বিরহের সুর। নিহত ও আহত সতীর্থদের না ভোলার শপথ নেন তারা। 

মার্চ শেষে শহিদ মিনারে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আজ ৫ সেপ্টেম্বর শহিদি মার্চ কর্মসূচি থেকে ৫টি দাবি জানাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে-১. গণহত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ২. শহিদ পরিবারদের আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দ্রুত সময়ের মধ্যে করতে হবে, ৩. প্রশাসনে দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে, ৪. গণভবনকে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করতে হবে এবং ৫. রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করতে হবে। 

শহিদি মার্চে উপস্থিত ছাত্র-জনতা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থান সাত শতাধিক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং সহস্রাধিক মানুষের আহতের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে। এই যে এতগুলো মানুষের আত্মত্যাগ তাদের স্মরণে আজকের এই কর্মসূচি। নিহত ও আহতদের যাতে কেউ ভুলে না যায়, সেই ঐতিহাসিক সময়টি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এই শহিদি মার্চ। এই হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। 

এর আগে দুপুর আড়াইটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাদের বেশির ভাগের হাতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দেখা গেছে। মার্চটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডি, সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে শেষ হয়। 

এ সময় তারা ‘আবু সাঈদ-মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘শহিদদের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘শহিদদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন ভারতে’, ‘সরকার কী করে, হাসিনা ভারতে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে মিছিলের শুরুটা দেখেছেন কিন্তু জানেন না মিছিলের শেষটা কোথায়। এ সময় লোকে লোকারণ্য শহিদ মিনার প্রকম্পিত হয় স্লোগানে-স্লোগানে। ঠিক যেভাবে প্রকম্পিত হয়েছে এক মাস আগে-আজকের দিনে। 

শহিদি মার্চের রুট ছিল-রাজুভাস্কর্য, নীলক্ষেত, সায়েন্সল্যাব, কলাবাগান,. সংসদ ভবন, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, রাজু ভাস্কর্য, শহিদ মিনার।

এর আগে বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মার্চে শহিদদের স্মরণ করে ছবি, উক্তিসহ বিভিন্ন স্মারক নিয়ে ছাত্র-জনতাকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা নিজ জায়গা থেকে শহিদি মার্চে অংশ নেবে। 

এ ছাড়া ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে শহিদি মার্চ পালনের কথা জানান। সরকার পতনের এক মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনে শহিদদের ছবি থাকতে পারে। যে কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্র-জনতা শহিদ হয়েছেন, সেসব কথা প্ল্যাকার্ডে থাকতে পারে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কী চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে কী চাই-এসবও থাকতে পারে।

‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ অর্জনের একমাস পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন। সে বার্তায় তিনি জুলাই এবং আগস্ট মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারে একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করার কথা বলেছেন। পাশাপাশি খুনিদের প্রত্যার্পণ এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন।

গত জুলাইয়ের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ওই আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগসহ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা-নির্যাতনের একপর্যায়ে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে সরকারি নির্দেশে পাখির মতো গুলি করে মারা হয় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনা। যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলের অবসান ঘটে। 

এদিকে, সরকার পতনের পর গত ৩০ দিনে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আর্থিক খাতসহ নানা পর্যায়ে বেশ কিছু বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী নেতাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হচ্ছে। সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে বিভিন্ন অঙ্গনে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
এই বিভাগের আরো খবর